আরও জানতে লিংকে ক্লিক করুন।
[ Ссылка ]
[ Ссылка ]
[ Ссылка ]
[ Ссылка ]
[ Ссылка ]
প্রখ্যাত সুফি সাধক কুতুব-ই-জাহান হযরত বদিউদ্দীন আহমেদ জিন্দা শাহ মাদার এর নাম অনুসারে মাদারীপুর অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। শাহ মাদার (র.) ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সিরিয়া হতে সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসনকালে (১৩৫১-১৩৮৮খ্রি:) ভারতীয় উপমহাদেশে এসে এক পর্যায়ে বাংলায় আসেন। বঙ্গের নানা স্থানে ভ্রমণ করেন। চতুর্দশ শতাব্দীর কোনো এক সময়ে বঙ্গের বিভিন্ন স্থান ভ্রমনের এক পর্যায়ে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের উত্তর সীমান্তে গভীর অরণ্যের যে স্থানটিতে তিনি ক্ষণিকের অতিথি হয়ে সহযাত্রীদের নিয়ে যাত্রা বিরতি বা বিশ্রাম গ্রহণ করেছিলেন সে স্থানটিতে তার নামানুসারে হযরত শাহ মাদার (র) এর দরগাহ শরীফ নামকরণ করে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিক্রমপুরের জমিদার ভূমিহীন প্রজাদের পূনর্বাসনের লক্ষে চন্দ্রদ্বীপের স্মৃতিবিজড়িত ঐ স্থানটিকে কেন্দ্র করে সরকার মাদারণ বা মাদারণ অঞ্চল নামে আখ্যায়িত করে ফসলি জমি ও আবাসন গড়ে তুলেন। যা পরবর্তীতে নগরায়নে রুপ নিতে থাকে, নাম হয় মাদারণ গ্রাম-ইউনিয়ন। পর্যায়ক্রমে নগর সভ্যতার বিবর্তনের ফলে মাদারণ নাম থেকে ক্রমাগত বিবর্তনের মাধ্যমে মাদারীপুর নামটির সৃষ্টি হয়।
পাকিস্তান আমল
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব বাংলার জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন ধীরে ধীরে ভাঙ্গতে শুরু করে। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজেদের ক্ষমতা সংহত করার চেষ্টা চালায়। এ অঞ্চলের জনগণ সমস্ত শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে মাদারীপুরের অধিবাসীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয় মাদারীপুর শহর। এর আগে এ অঞ্চলের অন্যান্য স্থান শত্রু মুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
১০ ডিসেম্বর সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী। সেই থেকে দিবসটি মাদারীপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযোদ্ধারা জানান, পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল প্রথম বিমান থেকে মাদারীপুরে গুলি বর্ষণ করে। ২৪ এপ্রিল সড়ক পথে শহরে এসে এ. আর. হাওলাদার জুট মিলে হানাদার ক্যাম্প স্থাপন করে। শুরু হয় মাদারীপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার। রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় মুক্তিকামী মানুষদের ধরে ধরে হত্যাযজ্ঞ চালায় হানাদার বাহিনী। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয় হানাদাররা। জানা গেছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার সবক’টি থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এ কারণে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জেলার এ. আর হাওলাদার জুট মিলের ভেতর এবং সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের চারদিকে থেকে ঘিরে রাখে। ৯ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী মাদারীপুর ছেড়ে ফরিদপুর চলে যাবে- এমন সংবাদ পেয়ে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পশ্চিমপাড় পর্যন্ত সড়কের চার কিলোমিটার জুড়ে অবস্থান নের মুক্তিযোদ্ধারা। ৯ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে পাক হানাদার বাহিনী গোলাবারুদ, অস্ত্র ও কনভয়সহ রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘটকচর ব্রিজ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ শুরু করেন। গ্রেনেড হামলা করতে গিয়ে হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয় সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা ১৪ বছর বয়সী সরোয়ার হোসেন বাচ্চু। তুমুলযুদ্ধ শেষে ১০ ডিসেম্বর বিকেলের সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে হেলে পরে ঠিক সে সময় আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী। বিজয় পতাকা ওড়ে মাদারীপুর শহরে। এ যুদ্ধে ২০ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা আত্মসমর্পণকারীদের অস্ত্র-শস্ত্র জব্দ করে ১০ ডিসেম্বর সারা রাত সমাদ্দার ব্রিজ অবরোধ করে রাখেন। পরদিন ১১ ডিসেম্বর সকালে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কলাগাছিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে। ১২ ডিসেম্বর তাদের মাদারীপুরে এনে সাব-জেলে বন্দি করে রাখা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশ
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। স্বাধীনতার পর থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আজ আমরা এখানে এসে পৌঁছেছি। মাদারীপুর ১৮৫৪ সালে মহকুমা হিসেবে ঘোষিত হলে এ শহর মহকুমা শহর হয়। সর্বপ্রথম ১৮৭৫ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে মাদারীপুর পৌরসভা গঠিত হলে এই শহরটি পৌর শহরের মর্যাদা পায়। দীর্ঘদিন পর ১৯৮৪ সালে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর মাদারীপুর জেলা শহর এবং জেলার সদর দপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
Ещё видео!