বিশ্বের সবচেয়ে অমানবিক পাঁচ কারাগার
আধুনিককালে কারাগারের নতুন নাম দেয়া হচ্ছে ‘সংশোধনাগার’। অর্থাৎ, কারাগার হবে এমন একটি যায়গা যেখানে অপরাধী তার পাপের ফল ভোগ করার পাশাপাশি সংশোধনের সুযোগ পাবে। কিন্তু খোদ কারাগারই যদি যাবতীয় মানবাধিকার বিবর্জিত হয়, সেখানে অপরাধীর ফিরে আসার সুযোগ থাকে না। অপরাধীকে পুনরায় অপরাধী বানায়, এরকম ৫টি নিকৃষ্ট কারাগার নিয়ে এ আয়োজন।
সাবানেতা কারাগার, ভেনেজুয়েলা
ভেনেজুয়েলার শতকরা ৮০ ভাগ কারাগারই পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেগুলো পরিচালিত হয় সশস্ত্র কারাবন্দীদের দ্বারা! এর মধ্যে অন্যতম সাবানেতা কারাগার। মাত্র ৭০০ জন বন্দী রাখার অবকাঠামোর এই কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ৩,৭০০’র বেশি! বিপদজ্জনক এ কারাগারে কয়েদীর সংখ্যার তুলনায় কারারক্ষী অত্যন্ত কম। প্রতি ১৫০ জন আসামীর বিপরীতে কারারক্ষী মাত্র ১ জন। মারামারি, রক্তারক্তি নিত্যদিনের ঘটনা। তাই অবস্থা বেশি বেগতিক বা খুনোখুনি হলেও অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁছুনোর আগ পর্যন্ত হাত গুঁটিয়ে বসে থাকে নামমাত্র কর্তৃপক্ষ। এরকম বিশৃঙ্খল কারাগারে তাই দাঙ্গা বাঁধে অহরহই। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দাঙ্গাটি হয় ১৯৯৪ সালে, যেবার ১০৮ জন বন্দী নিহত হয়।
রিকার্স আইল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক
রিকার্স আইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম কারাগার। এখানে মূলত ১ বছরের কম মেয়াদী আসামিদের, কিংবা বিচারকার্য চলছে এরকম অভিযুক্তদের রাখা হয়। এটি আমেরিকা তথা বিশ্বেরই অন্যতম কুখ্যাত একটি কারাগার। এ কারাগারে কেবল ছোটোখাট অপরাধের জন্য সাময়িক সময়ের জন্য রাখা হয়। ফলে, কারাগারের নির্মম পরিবেশের কারণে অধিংশ সময়ই অপরাধী তার কৃতকর্মে তুলনায় অনেক বেশি সাজা ভোগ করেন। এখানে বন্দীদের সংশোধনের নামে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালানো হয় বন্দীদের উপর।
ব্যাং ক্বং প্রিজন, থাইল্যান্ড
কারাবন্দীদের বিনা কারণে কিংবা সামান্য ভুল ত্রুটির জন্যও নির্মম সব সাজা প্রদান এবং শারীরিক নির্যাতনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত কারাগারের একটি হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ডের বৃহত্তম কারাগার ব্যাং ক্বং। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদেরই এ কারাগারে রাখা হয়। এ কারাগারের ধারণক্ষমতা ৩ হাজার হলেও কারাবন্দীর সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। এখানকার সিংহভাগ কারাবন্দীই ২৫ বছর বা তার অধিক সময়ের দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত। এর মাঝে ১০ ভাগ আবার রয়েছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। নতুন আগত আসামিদের প্রথম তিন মাস হাতে শিকল পরিয়ে রাখা হয়। আর এখানে দিনে একবেলা খাবার দেয়া হয়।
পেটাক আইল্যান্ড প্রিজন, রাশিয়া
রাশিয়ার সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং বিপদজনক সন্ত্রাসীদেরই পেটাক আইল্যান্ড কারাগারে রাখা হয়। পেটাককে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে অমানবিক কারাগার, যেখানে বন্দীদেরকে সারাদিনে কেবল দেড় ঘন্টা বাইরে বের হবার সুযোগ দেয়া হয়। বাকি সময়টা কাটাতে হয় পাখির বাসার মতো ছোট খুপরির মতো কক্ষে। আর এমন দমবন্ধ বন্দীদশায় একজন আসামি বছরে কেবল দুবার সর্বোচ্চ দুজন করে অতিথির সাথে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট করে সাক্ষাতের সুযোগ পান!
ইউএসপি ফ্লোরেন্স অ্যাডম্যাক্স, যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ফ্লোরেন্সে অবস্থিত ‘ইউএসপি ফ্লোরেন্স অ্যাডম্যাক্স’ কারাগারটি প্রস্তুত করা হয়েছিল দেশের সবচেয়ে দাগী, হিংস্র এবং অবাধ্য আসামিদের রাখার জন্য। যাদের অন্য যেকোনো কারাগারেই বন্দী করে রাখা বেশ কষ্টসাধ্য। আমেরিকার তাবৎ হাই-প্রোফাইল বন্দীদের ঠিকানা এই কারাগার হলেও এখান থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো বন্দী পালাতে পারেনি, এতটাই শক্ত এর নিরাপত্তাব্যবস্থা। অত্যন্ত ধূর্ত বন্দীও এ কারাগারে ঢোকার পর আর দিশা খুঁজে পান না, এমনকি নিজের অবস্থানই নির্ধারণ করতে পারেন না। কারণ, বন্দীদের সেলে জানালাগুলো মাত্র ৪ ইঞ্চি প্রস্থের!
![](https://i.ytimg.com/vi/UCY3MKRPNRM/maxresdefault.jpg)