গ্রাম থেকে গ্রামে পাঠাগার গড়ার নেশায় ছুটে চলছে বইপ্রিয় একদল যুবক। এই সংগঠনের প্রত্যেকেরই শপথ বাক্য একটি-'বই পড়ি পাঠাগার গড়ি' স্লোগানে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি পাঠাগার গড়ে তোলা। এই তরুণ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেসরকারি উচ্চ শিক্ষায় 'নো ভ্যাট অন এডুকেশন' আন্দোলনের উদ্যোক্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ডিপার্টমেন্টের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আরিফ চৌধুরী শুভ।
তারা শুধু নিজেরাই বই পড়েন না, অন্যের বই পড়ার সুবিধার জন্য গড়ে তুলেছেন জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন (জাপাআ) নামের সংগঠন। আরিফ শুভ ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলেন সংগঠনটি। মাত্র ১০টি পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও দুই বছরে সারাদেশে ২ শতাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন সেবা দিয়েছে সংগঠনটি।
শুধু পাঠাগার গড়ার কাজই নয়, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শীতবস্ত্র ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, অসহায়দের ঘর প্রদান, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, সমাজে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি ও সহশিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমও পরিচালনা করেছে তারা। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি সরকারি স্বীকৃতিও পায় সংগঠনটি। পাঠাগার গড়ার আন্দোলনে কাজ করছে আরিফ চৌধুরী শুভসহ ৩৩ সদস্যের একটি টিম।
আরিফ চৌধুরী শুভ বলেন, আমরা ১০টি পাঠাগার দিয়ে শুরু করেছিলাম। সারাদেশে ২০০টির বেশি পাঠাগারকে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছি। ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পাঠাগার দিবসে বাংলাদেশকে আরও অর্ধশতাধিক পাঠাগার উপহার দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, সংস্কৃতিমনা মানুষ কখনও বিপথগামী হতে পারে না। আমরা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন সময় ফেসবুকে প্রচারণা চালাই। সমাজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা উদ্যোগী মানুষটাকে খুঁজে বের করি। যারা পাঠাগার গড়তে চায় প্রাথমিকভাবে তাদের ইচ্ছাশক্তি, স্থান বা ঘর এবং বই- এই ৩টি জিনিস থাকলেই হলো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘর আর বইয়ের সংকটই অনেকের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কাউকে ঘর করে দেওয়ার মতো আমাদের অবস্থা এখনও হয়নি। সরকার সহযোগিতা দিলে আমরা সেটিও করব। আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেদের টাকায় এ কাজটি করে থাকি। প্রথম দিকে বই সহায়তা দিয়ে ভাড়া জায়গায় হলেও পাঠাগারটা চালু করার উদ্যোগ নিই। তারপর স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করি। এভাবে প্রতিটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়।
আমাদের প্রতিষ্ঠিত ও তালিকাভুক্ত পাঠাগারগুলোকে আমরা নিজ নিজ জেলার সরকারি গণগ্রন্থাগারের আওতায় রেজিস্ট্রেশনের জন্য সহায়তা করি। পাঠাগারগুলোতে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান করি। পাঠাগারগুলো নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্ট তৈরি করে জাপাআ-এর ওয়েবসাইটে (িি.িলঢ়ধনফ.ড়ৎম) ছেড়ে দেই। ফলে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে ওই পাঠাগার সম্পর্কে জানতে পারে পাঠক।
সংগঠনটি তিনটি জিনিসকে প্রাথমিক টার্গেটে নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি পাঠাগার তৈরি, সারাদেশের পাঠাগার নিয়ে পরিসংখ্যান এবং পাঠাগারগুলোকে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জাপাআ-এর উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ড. এম ফিরোজ আহমেদ মনে করেন, এ সময়ের জন্য পাঠাগার প্রতিষ্ঠা একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তবুও জাপাআ সেই কাজটি করছে ব্যক্তি উদ্যোগে। সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য আরিফুল সাজ্জাত বলেন, সমাজের যে জায়গায় পরিবর্তন হওয়া দরকার সেটি আসলে কতটুকু হয়েছে? যারা এই পরিবর্তন করতে চায় তাদের পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। পাঠাগার গড়ার মাধ্যমে এই সমাজকে সত্যিকারে একদিন বদলে দেবে এই তরুণ দল।
Ещё видео!